জানা গেছে, করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন কারণে অব্যাহতভাবে কমছিল বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। টানা ১০ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজারমূলধন ৫৪ হাজার কোটি টাকা কমেছিল। বিষয়টি নিয়ে বাজারে আতঙ্ক তৈরি হয়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বুধবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে পতন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর পতন ঠেকাতে নিয়ম পরিবর্তন করে সূচকের ওপর সার্কিট ব্রেকার (দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা) কমিয়ে আনা হয়েছে। বাজারে এটি একধরনের ‘লাইফ সাপোর্ট’। আর এই প্রক্রিয়ায় সূচক বাড়ানো হল ৩৭১ পয়েন্ট। ফলে একদিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন বেড়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। বিএসইসির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জকে এই নতুন নিয়মের নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, নতুন নিয়মে যে কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরু হবে সর্বশেষ ৫ কার্যদিবসের সর্বশেষ গড় মূল্য দিয়ে (ওয়েটেড ক্লোজিং প্রাইজ)। আর ওই দরের নিচে শেয়ারের দাম নামতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার সীমা অপরিবর্তিত থাকবে। এতে লেনদেন শুরুর আগেই প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দরে উত্থান হয়। ফলে মূল্যসূচকে বড় উত্থান ঘটেছে। এরপর রোববার মাত্র ১৪ পয়েন্ট নিম্নমুখী ছিল সূচক। যে কোনো বিবেচনায় এটি সহনীয়।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, সবাই সম্মিলিতভাবে আমরা বাজারের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অত্যন্ত ইতিবাচক। শেয়ারবাজারে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। অনেক দেশ এখন আমাদের অনুসরণ করবে। তিনি বলেন, আমরা চাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসুক। এতে বাজার ইতিবাচক হবে। রকিবুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রীও এ ব্যাপারে পজিটিভ। তার মতে, সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় সাময়িক সময়ের জন্য শেয়ারবাজার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ ব্যাপারে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী বাজারে পতন হচ্ছে। অনেকে বন্ধ করেছে। বাংলাদেশেও সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করা যেতে পারে। তবে তার মতে, শেয়ারবাজারে মূল সমস্যা সুশাসনের অভাব। বাজারকে টেকসই করতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। তার মতে, বিও অ্যাকাউন্ট, লেনদেনসহ অনেক বিষয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে।
এদিকে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে কাতারে। এ ছাড়াও গত এক সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, যুক্তরাজ্য সৌদি আরব, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইউরোপ এবং ওমানের শেয়াবাজারের বড় দরপতন হয়েছে।